স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুরের কাপাসিয়াতে প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় বন্ধুসহ সহোদর ভাইকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই। ঋণগ্রস্থ ভাই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের ঘরে বন্ধুকে নিয়ে চুরি করার পরিকল্পনা করে, এসময় বোন চিৎকার করলে তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমু (৩৯) মরদেহ নিজ বসত ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় নিহতের বাবা মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারী কাপাসিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে শাহনাজ বেগম শিমু’র আপন ছোট ভাই কাপাসিয়ার কুলগঙ্গা গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মো. মিনাল ওরফে মিষ্টার (২১) কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
গাজীপুর পিবিআই’র উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ্ ইমরান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই কাপাসিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআই’র একাধিক টিম মামলাটির রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূল আসামী মো. কামরুজ্জামান রুবেলকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকা হতে ও পরে তার দেয়া তথ্য মতে একই দিন মো. মিনাল ওরফে মিষ্টারকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে একই দিন গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানায়, নিহত শিমুর আপন ছোট ভাই রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকুরী করতো। পাঁচ মাস আগে রুবেল ওই হোটেলের চাকুরী ছেড়ে দিলে অর্থনৈতিক সংকটে পরে, অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে। ঋণে জর্জরিত রুবেল ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে এবং দুইদিন আগে অপর আসামী মো. মিনাল ওরফে মিষ্টারের সাথে যোগাযোগ করে। ঘটনার দিন বিকেলে মিস্টার জয়দেবপুর রেল স্টেশনে আসে। এসময় রুবেল ও মিনাল একটি ব্যাগের মধ্যে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে করে শ্রীপুর স্টেশনে নামে। সেখান থেকে অটোরিক্সা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যায়। সেখানে কিছু সময় অপেক্ষা করে অটোরিক্সা দিয়ে রাত ৮টার দিকে তারা সেখান থেকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যায়, বরামা ব্রিজ পাড় হয়ে পায়ে হেঁটে তারা ভিকটিম শাহনাজ আক্তার শিমুর বাড়ীর সামনে আখ খেতে লুকায়। রাত ১২টার দিকে রুবেল-মিস্টার শিমুর বাড়ীর সীমানা প্রাচীরের উপর দিয়ে বাসার ছাদে উঠে। ছাদ থেকে রান্না ঘরের টিন খুলে রান্না ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করে। রান্না ঘর থেকে দরজা খুলে বাইরে এসে বাড়ীর পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ভেতরের সিটকারী খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে। এসময় তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙ্গলে শিমু চিৎকার শুরু করলে মিনাল সুইচ গিয়ার ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়, কিন্তু শিমু চিৎকার না থামালে গামছা দিয়ে মিশুর মুখ চেপে ধরে এবং রুবেল শিমু’র হাত দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এসময় রুবেলের দুই হাতে শিমুর হাতের নখের আচড় লাগে। রুবেলকে যাতে চিনতে না পারে, সেজন্য শিমুর চোখ, মুখ, গামছা দিয়ে বেঁধে ফেললে শিমুর মিনালের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলে আসামী মিষ্টার শিমুর মুখে আঘাত করে এবং শিমুর বুকের উপর বসে গলায় চেপে ধরে। এরপর আসামী রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার ও তিন হাজার টাকা, শিমুর মোবাইল ফোন নিয়ে রুবেল ও মিষ্টার ভিকটিম শিমু’র হাত ও পা বেঁধে বাড়ির পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে রুবেল চাকু, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙ্গে ঝাজর এলাকায় ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেয় এবং লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকা বিক্রি করে। রুবেলকে গ্রেফতারের পর স্বর্ণ বিক্রির ৫৭হাজার টাকা উদ্ধার ও তার দেয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরের ঝাজর কবরস্থান ব্রীজের নীচে খাল থেকে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাইকৃত মোবাইল সেটের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, নিহতের ভাই রুবেল ও মিস্টার স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবান দিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।