ইজতেমার উভয় পক্ষকে মিলেমিশে থাকার অনুরোধ জানালেন- স্বরাস্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার
বিশ্ব ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি সভায় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম পক্ষের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের (যোবায়ের গ্রæপ) দাবীর প্রেক্ষিতেই প্রতিবছর প্রথমেই আপনাদের সুযোগ করে দেই। সে দাবী রক্ষা করে সম্মানের সাথে মাঠ বুঝিয়ে দিবেন। যাতে কোন প্রকার ভাংচুর না হয়, কেউ যাতে কোন অভিযোগ না করে, এটা আমার অনুরোধ। আমরা গতবারও শুনেছি ভাংচুর হয়েছে, কিছু জিনিস খোয়া গেছে, নানা ধরনের কথাবার্তা শুনেছি। আমরা চাই সুন্দর ভাবে মাঠটা বুঝিয়ে দিবেন। এছাড়াও গোয়েন্দাবাহিনীরও একটি অনুরোধ রয়েছে, দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা না বাড়িয়ে সকাল থেকেই মাঠটি বুঝিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা নিবেন।
সোমবার বিকেলে গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্ততি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ফলো-আপ সভায় মন্ত্রী বলেন, এখানে আমরা যারা এসেছি সবাই চাই বাংলাদেশের ঐতিহ্য এই ইজতেমা যা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এর সুনাম যাতে অক্ষুন্ন থাকে।
সবাইকে মিলেমিশে থাকার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গতকাল থেকে কিছু ঘটনা ঘটছে যা দুঃখজনক। সবার কাছে বিনীত ভাবে অনুরোধ রইলো এসব ঘটনা আর ঘটাবেন না, সবাই মিলেমিশে থাকবেন। মসজিদে গিয়ে আল্লাহর ঘরে গিয়ে আবার দখল-বেদখল করেন এমন কিছু আমাদের জন্য লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকলো এসব কাজ থেকে আপনারা বিরত থাকবেন, মিলেমিশে চলবেন আমাদের সে শিক্ষাটাই দিবেন। আল্লাহর দাওয়াতের শিক্ষাটা যেমন দিচ্ছেন তেমনি মিলেমিশে থাকার শিক্ষাটাও দিবেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ময়দানের কাজে সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে এবার বিদেশি মেহমানদের জন্য নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। প্রথমপর্বে আগত বিদেশি মুসল্লিরা আখেরি মোনাজাতের পর বিমানবন্দর হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। সেখান থেকে তারা তাদের স্ব-স্ব দেশে ফিরবেন। ইজতেমা আয়োজক কমিটির দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি তাদের মধ্যে বিগত বছরের মতো আর কোন ভুল বোঝাবুঝি হবে না।
সভায় ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, আমরা দ্বীনের কাজ করার জন্য আল্লাহকে খুশি রাজি করার জন্য কাজ করি। সেখানে আমাদের মধ্যে বিভেদ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাইনা এই বিভেদটা আগামী দিনের জন্য থাকুক।
আমাদের নিজেদের প্রত্যেকের জানা আছে বিশ্ব ইজতেমা বা আমাদের তবলিগ জামায়েত যখন যেকোন জায়গাতে কাজ সারা বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের সহযোগিতা করে, বিশ্বাস করে।
সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ আপনাদেরকে সহায়তা করে থাকেন। এই হৃদ্যতা আন্তরিকতা ও মহŸতটা আমরা এই জিনিসটা অতীতে যেমন ছিল এখনো তেমনটা আমরা দেখতে চাই। আগামীদিনের এই বিশ্ব ইজতেমায় আমরা কোন কিছু করতে চাইনা যে কারণে অপর আরেকটা লোকের ক্ষতি হয়। আমি আল্লাহকে খুশি রাজি করার জন্য এসেছি সেই জায়গায় যদি এক জন আরেক জনকে কষ্ট দেয়। কেউ কাউকে ক্ষতি করতে পারে না, এটা আমার বিশ্বাস। আমরা চাই সেই বিশ্বাস যোগ্য কাজটি সমাধান করার জন্য, আল্লাহ্কে খুশি রাজি করার জন্য আমরা যেন কাজ করি। আমরা যেন প্রশাসন থেকে শুরু করে আমরা যারা এসেছি আমরা চাচ্ছি আল্লাহ্ তায়ালা যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে কাজটি সম্পন্ন করার তৌফিক দেন। আমরা চাই আপনাদের সবার ঐক্যমত প্রশমনকল্পে এই বিশ্ব ইজতেমায় কোন রকম, কোন ধরনের ত্রæটি বিচ্যুতি এক তিল পরিমাণও কোথাও যেন না ঘটে এটা আপনাদের উভয় পক্ষের কাছে বিনয়ের সাথে অনুরোধ রইলো।
স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রোমানা আলী টুসি এমপি, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান, গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, ইজতেমার মুরুব্বী প্রকৌশলী মাহফুজ ও মিজানুর রহমান প্রমুখ।
আগামী ২, ৩ ও ৪ ফেব্রæয়ারী প্রথম পর্ব ও ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রæয়ারী দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল মন্ত্রণালয়, সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *