স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নরুন গ্রামে খাস খতিয়ানভুক্ত আর.এস ১৮২৫ নং দাগে ৩.৯৮ একর জমির একটি খাস পুকুর খননের নামে চলছে মাটি বিক্রির এক মহাযজ্ঞ।
জানা গেছে, ওই পুকুরটি খনন বাবদ ৫২ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৫ টাকা এবং পুকুরে একটি ঘাটলা বাধানোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬১টাকা। ২০২২ সালের শেষের দিকে ‘মেসার্স জসিম এন্টারপ্রাইজ’ ওই কাজের ঠিকাদার হিসেবে নিযুক্ত হয়।
টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে ওই পুকুরটি খনন ও ঘাটলা বাঁধাই কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ওই সময়ে কাজ সমাপ্ততো দূরের কথা উল্টো বছর জুড়ে চলছে মাটি বিক্রির হিড়িক।
স্থানীয়রা জানায়, যেখানে পুকুরটি খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হওয়ার কথা ১০-১২ লাখ টাকা, সেখানে ঠিকাদার কাজের সরকারি বিল হিসেবে পাবেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া আরো মাত্রাতিরিক্ত লাভের আশায় ওই পুকুর খননের নামে বিগত দুই বছরে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রায় কোটি টাকার মাটি বিক্রি করে ফেলেছে। ঠিকাদার জসিম স্থানীয় একটি কুচক্রের যোগসাজশে রাত দিন শত শত ট্রাক মাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন রিসোর্টের জন্য কৃষি জমিসহ নীচু জমি ভরাট করে যাচ্ছে। চক্রটি মাটি ফেলে ওই এলাকার পাকা রাস্তা নষ্ট করছে।
পার্শ্ববর্তী দেওতলা গ্রামের একটি বিনোদন পার্কের মাটি ভরাটের ঠিকাদার মো. আকবর হোসেন যুগান্তরকে জানান, তিনি ওই বিনোদন পার্কের নীচু (কৃষি) জমি ভরাটের জন্য পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে ১৫ লাখ টাকা চুক্তি করেন। পরে তিনি নরুন (মসজিদপাড়া’র) ওই দীঘি (পুকুর) থেকে গাড়ি প্রতি ১৩৭০ টাকা দরে মাটি এনে ভরাট করি। পরে তাকে চুক্তি অনুযায়ী আরও বেশী মাটি ভরাট করতে হয়েছে। এছাড়া দূরত্ব অনুযায়ী নরুন ফকির (দরগাহ) পাড়া এলাকায় ৪০ গাড়ি, মোমেন ও দেলোয়ারের নিকট ৮০ গাড়ি, সাইফুল ইসলামের নিকট ২৭ গাড়ী, নজরুল ইসলামের নিকট ৮০ গাড়ী, শফিকুল ইসলাম এর নিকট ১২০ (লড়ি) গাড়িসহ আক্তার, তাজুল, আরিফ, শাকের, মামুন সজিব, কাসেম, মমিন, বিল্লাল, আকবর, ছানাউল্লাহ ও আতিউল্লাহর নিকট ১৪০০ গাড়ী মাটি বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। চক্রটি পুকুর থেকে দূরত্ব অনুযায়ী ৮০০-১৪০০ টাকা দরে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়েছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছ ওই পুকুর থেকে বেকু দিয়ে মাটি কেটে লড়ি দিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার জসিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বলেন, পুকুরের মাটি কোথাও বিক্রি করা হচ্ছে না। তবে, প্রয়োজনে যে কেউ গাড়ী ভাড়া দিয়ে মাটি নিতে পারবেন। সদ্য যোগদানকারী কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম ইমাম রাজী টুলু জানান, তিনি গত ১৭ এপ্রিল কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।