স্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাতের আধারে ফসল ও সরকারি সড়ক নষ্ট আবার আবাধি জমি ধ্বংস করে প্রকাশ্যে সমুদ্র বানানোর হুমকি মাটি খেকোদের । তাদের হুমকিতে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকছেন সংখ্যালঘু পরিবার। এসবের প্রতিবাদ ও আবাধি জমি রক্ষায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক-কৃষাণীরা। মঙ্গবার (১৯মার্চ) দুপুরে উপজেলার বামনাবহ এলাকায় এমন প্রতিবাদ জানানো হয়।
![](https://ajkerjanata.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-20-at-12.01.24-AM-1-1024x722.jpeg)
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী কৃষক-কৃষাণী সূত্রে জানা গেছে কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের বামনাবহ এলাকায় কোনো শিল্পকারখানা নেই, একেবারেই প্রত্যন্ত গ্রাম এটি। অন্য কোনো আয় উপার্জনের পথ না থাকায় কৃষির ওপর নির্ভরশীল এখানকার কৃষক-কৃষাণীরা। প্রতি মৌসুমে সরিষা, বোরো ধান, ভুট্টা, পাটসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেই চলে তাদের সংসার। কিন্তু সেখানেও হায়েনার মতো নজর পড়েছে মাটি খেকোদের। মাত্র দুই রাতে ফসল ও শাহবাজপুর- বামনাবহ-দক্ষিণ পাকুল্লা সদ্য মেরামতকৃত সরকারি সড়ক নষ্ট এবং দুর্ঘটনা রক্ষার সাংকেতিক সড়ক পিলার ভেঙ্গে প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়।
পাশের গোসাত্রা এলাকার মাটি খেকু ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা ওই রাস্তা বানিয়ে ফসলি জমির মাটি লুটের চেষ্টা করেছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক-কৃষাণীরা নিষেধ করলে উল্টো তাদের গালিগালাজসহ নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখান ওই মাটি খেকু ও তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয়, প্রশাসন তার পকেটে জানিয়ে মাটি কেটে সেখানে সমুদ্র বানানোর হুমকিও দেন মাটি খেকু ওবায়দুর। তাদের হুমকিতে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার। এসবের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ করেঁচে প্রায় অর্ধশাতাধিক কৃষক- কৃষাণীরা।
![](https://ajkerjanata.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-20-at-12.01.24-AM-2-1024x758.jpeg)
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রায় ৭৫জন কৃষক-কৃষাণী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ করেছেন।
এসময় কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের চলাচলের একমাত্র সরকারি সড়ক নষ্ট ও সড়ক পিলার ভেঙ্গে ক্ষমতার দাপটে ফসল ও কৃষি জমি নষ্ট করে মাটি কাটার পায়তারা করেছেন মাটি খেকোরা। বাধা দিলে মাটি খেকোরা বলেন কেউ এলে মাইরা হালামু, কাইটা হালামু। কৃষাণী সিমা সরকার, অনিতা সরকার ও মনি সরকার বলেন, আমার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বলে যেন আমাদের ওপর জুলুম বেশি করছে। আমাদের ফসল ও কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা বানিয়েছে মাটি খেকোরা। মনতাজ উদ্দিন বলেন, এখানে শাকিল মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির জমির মাটি কাটবে। কিন্তু একটা জমির মাটি কাটলে অন্য জমিও ভেঙ্গে পড়বে। সিরাজ উদ্দিন বলেন, ক্ষেতের একটা গুছা নষ্ট হলে আমাগো কলিজায় লাগে, কিন্তু ওরা ক্ষেত নষ্ট করছে।
মোরশেদা বেগম বলেন, আমাদের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা গরীব মানুষ বলে আমাদের এতো ক্ষতি করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, যেভাবেই হোক আমাদের জমি রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
শুধু এরাই নয় এমন ভুক্তভোগী আরো কৃষক-কৃষাণী বলেছেন, শুধু এখানেই নয়, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিভিন্ন এলাকার মাটি খেকোরা। মাটি খেকোদের থামানে না গেলে একসময় ফসল শূন্য হবে মাঠ, দেখা দিবে খাদ্য সংকটের। আমরা ঘরের ধানের ভাত খেতে চাই, আমরা কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধ চাই। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-কৃষাণীরা।
![](https://ajkerjanata.com/wp-content/uploads/2024/03/WhatsApp-Image-2024-03-20-at-12.01.25-AM-1024x789.jpeg)
অভিযুক্ত ওবায়দুর রহমান জানান, অভিযোগের পর তখন সাবেক ইউএনও জকি সাহেবের কাছে আমি ও বাদীরা গিয়েছিলাম। ওই ইউএনএ জকি সাহেব বলেছিলেন কেনা সম্পত্তিতে মাটি কাটা বন্ধ হবে না। ওই ইউএনও মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছিলেন জানিয়ে সাংবাদিকদেন সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার বার বার অনুরোধ জানান এই অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহম্মেদ জানান, বামনাবহ এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা একটি অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।